কেমন আছেন?

ক্রোধের "কয়েদি"

অয়ন ও রাব্বী দুজন খুবই ভালো বন্ধু। সেই ছোটবেলায় প্রাইমারির প্রথম ক্লাস থেকে বন্ধুত্ব। এমন করে খেলতে, চলতে, ফিরতে একসময় টিনএজে প্রবেশ করে। এই বয়সের আবেগের সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না। ভালোবাসার রঙ যেমন উজ্জ্বল, দুঃখের রঙও তেমনি গাঢ়! ফড়িংকে এরা বড় করে দেখতে পারে, অথচ, পাহাড়কে যেন বাধাই মনে করে না! এটা সেরকমই একটা বয়স...কিন্তু একদিন তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হলো! ধমনীর রক্ত টগবগিয়ে উঠলো! ঝগড়ার বিষয় খুবই তুচ্ছ- প্রাইভেটের সময় পাল্টেছে অয়ন কেন রাব্বীকে জানালো না! সেটার সূত্র ধরেই কথা কাটাকাটি শুরু। কিন্তু, হঠাৎ একজন উত্তরে অসংলগ্ন কিছু কথা বলে ফেলে। অন্যজন কি আর কম যায়? কি? তুই আমাকে কি বললি? এভাবে কথার উপর কথা চলতে চলতে নিজেদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ! অন্যরা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু ফল হলো না। কেউই কাউকে সরি বলবে না! দুজনেরই যুক্তি আছে!

"ও আমার সাথে এই এই করেছে। এটা কি ভুল না?"

"আমি কেন আগে তাকে সরি বলতে যাবো?"

দুজনের এই "অটল" চিন্তা থেকে ফিকে হতে থাকলো এত দিনের সম্পর্ক.. কিন্তু ভেতরে ভেতরে এরা আবার ভালোবাসা আর ক্রোধ মিশ্রিত এক অদ্ভুত আবেগ গলায় নিয়ে বসে আছে! খচখচ করা এই বস্তু ভেতরেও যায় না আবার বেরও হতে চায় না! অথচ কেউ আগালো না। এই ভারী বুক নিয়ে ক’দিন থাকা যায়? তবুও দিন কেটে যাচ্ছে এই কষ্ট নিয়েই...

এমন ঘটনা কি খুবই অপরিচিত লাগছে? লাগছে না আশা করি। এমন অনেক অনেক সময় আসে জীবনে, যখন এই "সরি" বলতে না পারার যে অপারগতা তা আমাদের দেহ, মন এবং সম্পর্কগুলোকে বিষিয়ে তুলে। অনেক সময় আমরা ক্ষমা করতে না পারার এই দিকটাকে এত প্রাধান্য দিয়ে ফেলি যে, জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আমরা এর জন্য বিসর্জন দিয়ে দেই। অথচ, যদি ক্ষমা করে দিতে পারতাম, ভুলে যেতে পারতাম জীবনটাকে হয়তো আরও অন্যরকমভাবে উপভোগ করতে পারতাম!

কিন্তু, কেন আমরা ক্ষমা করতে পারি না? অনেক সময় দেখা যায় নিজের ইগোকে এতটাই প্রাধান্য দিয়ে ফেলি যে ক্ষমা করে দিয়ে বা ক্ষমা চেয়ে আমি ছোট হবো সেই চিন্তাই মাথায় আনতে পারি না! আপন মনে ভাবতে থাকি যদি ক্ষমা করে দেই তবে সে হয়তো আমাকে ছোট মনে করবে, তার উপর থেকে আমি কর্তৃত্ব হারাবো! কখনো কখনো মনে জেগে উঠে প্রতিশোধের আগুন! কড়ায় গন্ডায় হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার চিন্তা! উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার ক্রোধ! আবার কখনো এটা নিছক বড় করে দেখা!

“আমি যদি ক্ষমা করে দেই তাহলে সেটা হবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া”

“এতবড় অন্যায় ক্ষমা করা যায় না।”

এভাবেই চলতে থাকে ক্রোধের আগুন! কিন্তু কারণ যাই হোক না কেন ক্ষমার মত মহত্ত্ব আর নেই। ভাবুন তো, যার সাথে আমাদের এই ক্ষমা করতে না পারার সম্পর্ক, যার সাথে আমাদের এই অভিমান আর অভিযোগের সম্পর্ক, সেই কি এমন মানুষ না, যাকে আপনি ভালোবাসেন? রবীঠাকুরের একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই "ক্ষমাই যদি করতে না পারো তবে ভালোবাসো কেন?" আপনি যাকে ভালোবাসবেন, এটা তার অধিকার যে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অন্যদিকে যে আপনাকে ভালোবাসে তার প্রতি আপনিও এই অধিকার দাবী করতে পারেন। আর যিনি ক্ষমা করতে জানেন, তিনিও ক্ষমা পাবেন!

একটা উদাহরণ দেই, মনে করুন একটা পানির বোতল। খানিকটুকু ভরা। এটা যদি আপনাকে তুলে ধরতে বলা হয় ৫ মিনিট, পারবেন না? বলবেন, এটা কোন ব্যাপার হলো? চিন্তা করুন তো, এই বোতলটাই যদি আপনাকে ধরে রাখতে হয় এক ঘণ্টা? এক বেলা? কিংবা এক মাস? এই ১০০ মি.লি পানির ওজনটাই আপনার কাছে কত বেশি মনে হবে! এবার এটাকেই তুলনা করুন আপনার উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলোর সাথে। আপনি এটাকে বুকে রেখে দিলে আপনার কাছে এমনই লাগবে!

অভিমান আর অভিযোগ একটা বোঝা। যখন নিজের ভেতর রেখে দেবেন এর ওজনে বুক ভারী হয়ে আসবে, শ্বাস নিতে কষ্ট হবে! সেই অভিমান আর অভিযোগের বাইরের কিছু চিন্তা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন সময়গুলো যখন জীবনে আসে তখন মনে হয় না কেউ যদি এই কষ্টের বোঝা আমার হয়ে বয়ে দিতো? কিংবা যদি আমি এই বোঝাটা বের করে দিতে পারতাম! আমি যে আর পারছি না!

আপনার মনই আপনাকে বলে দিচ্ছে আপনার কি করণীয়! কষ্টের বোঝাটা বুক থেকে বের করে ফেলে দিন। কিভাবে ফেলবেন? এর নামই "ক্ষমা"! ক্ষমা না করার হাজারটা যুক্তি হয়তো আপনি শোনাতে পারবেন। ক্ষমা করার একটা যুক্তি আপনাকে শোনাই, ক্ষমা করুন "নিজের জন্য"! আপনি ক্ষমা করলে অন্যের যত লাভ, তারচেয়ে বেশি লাভ আপনার। ঠিক উল্টোভাবে আপনি ক্ষমা না করলে অন্যের যত ক্ষতি, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি আপনার!

জীবনে সবাই আমরা সুখ চাই। সুখী হওয়ার সবচেয়ে সহজ সূত্র হচ্ছে forgive and forget...সবসময় সবকিছু এঁটে ধরে বসে থাকাতেই সুখ পাওয়া যায় না বরং অনেক ক্ষেত্রে সেটা "ছেড়ে" দিলেই সুখ নামক জিনিষটার দেখা পাওয়া যায়!

 

fascinated 0 Readers
informed 0 Readers
happy 0 Readers
sad 0 Readers
angry 0 Readers
amused 0 Readers

Appointment

01763438148