কেমন আছেন?

ভূতের আছর এবং বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার

গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা। মোরশেদা (ছদ্মনাম) রোহিতপুরের বাসিন্দা। ত্রিশ ছুঁই ছুঁই মোরশেদার দুই বাচ্চা, স্বামী বিদেশ থাকে। শাশুড়ির সাথে তুমুল ঝগড়ার ১ সপ্তাহ পর গ্রামের সবাই লক্ষ্য করল মোরশেদা যাকে পাচ্ছে হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরছে আর অনেক কথা বলছে! কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল, সে নিজেকে গ্রামের মোড়ল মনে করছে! ৩ দিন সারাক্ষন না ঘুমিয়ে থাকার পর যখন তাকে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গান গাইতে দেখা গেল, তখন সন্দেহের আর অবকাশ রইল না যে, মোরশেদাকে ভুতে ধরেছে!

মোরশেদা যখন কবিরাজের কবল থেকে বেরিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পৌঁছায়, ততোদিনে ২ মাস পেরিয়ে বেশ কিছুদিন। মজার ব্যাপার হলো, এই লক্ষনগুলো সবই বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার নামক একটি মানসিক ব্যাধির, যাতে আক্রান্ত আছে বাংলাদেশের ৮ লাখেরও অধিক মানুষ।

বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার একটি অত্যন্ত রহস্যময় রোগ, যাতে রোগী কিছু সময় উত্তেজনার তুঙ্গে থাকে, কিছু সময় স্বাভাবিক, কখনো থাকে বিষন্নতায় নিমজ্জিত। অতিরিক্ত প্রফুল্লতা, মাত্রাধিক কথা বলা, নিজেকে বাস্তবের চেয়ে বেশি বড় মনে করে সেই মোতাবেক অতিরিক্ত কাজ করা,  ঘুম না হওয়া এসব এই রোগের ম্যানিক সময়ের বা তুঙ্গে থাকাকালীন কিছু উপসর্গ। আবার,  হঠাৎ চুপ হয়ে মনমরা হয়ে থাকা, অপ্রয়োজনীয় কান্নাকাটি করা, ঘুম, খাওয়ার বা ওজনের দৃশ্যত তারতম্য হওয়া, মৃত্যুর চিন্তা করা এই রোগের বিষন্নতাকালীন উপসর্গ।

এই রোগ কোন জ্বীন-ভূতের জন্য নয়, হয়ে থাকে মস্তিস্কের কিছু গঠনগত পরিবর্তন ও নিউরোট্রান্সমিটারের (ডোপামিন,সেরোটোনিন) তারতম্যের জন্য। জীবনে একবার হলে,পারিবারিক ক্ষেত্রে এই রোগ কারো থাকলে এবং যেকোন স্ট্রেসে- বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার দেখা দেয়ার সম্ভাব্যতা কয়েকগুণ বেশি!

গবেষনা মতে, কবিরাজের ঝাড়ুর বাড়ির কোন সাফল্য না থাকলেও, উপযুক্ত সাইকিয়াট্রিক ঔষুধ সেবনে এই রোগ ভাল হয় এবং নিয়ন্ত্রনে থাকে।

প্রতিটি বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার রোগীর সমাজে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার সম্ভবনা এবং অধিকার আছে, আর আমাদের আছে মনুষ্য দায়িত্ব, তাদের এই অধিকার বুঝিয়ে দেয়ার!

fascinated 0 Readers
informed 0 Readers
happy 0 Readers
sad 0 Readers
angry 0 Readers
amused 0 Readers

Appointment

01763438148